Taleemun Nisa

বিয়ে : স্বপ্ন থেকে বাস্তবতা 

بسم الله الرحمن الرحيم 

“বিয়ে- স্বপ্ন থেকে বাস্তবতা “

(পডকাস্ট তা’লিমুন নিসা)

পডকাস্ট অতিথি – মুহ্তারামাহ ডা.নিশাত তাম্মিম

▪️ধর্মীয় ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিয়ের সংজ্ঞা:

সূরা রুম আয়াত নং ২১ –

“তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হল এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিণী সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তার কাছে শান্তি লাভ করতে পার আর তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। এর মাঝে অবশ্যই বহু নিদর্শন আছে সেই সম্প্রদায়ের জন্য যারা চিন্তা করে।”

বিয়ে একটি ইবাদত। এর উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে আছে ভালোবাসা,রহমত ও প্রশান্তি লাভ (আয়াত থেকে) এবং দ্বীনি জেনারেশন বিল্ড আপ। 

▪️কোথা থেকে ‘বিয়ে ফ্যান্টাসি’-র শুরু এবং কীভাবে পাব স্বচ্ছ ধারণা?

বিবাহের আগ্রহের কারণ-

১.অপোজিট জেন্ডারের প্রতি আকর্ষণ

২.মেন্টাল এম্পটিনেস (মেয়েদের)

এটা স্বাভাবিক। 

ফ্যান্টাসি হয় তখন যখন এসব নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা কথা বলা হয়,নানা অতিরিক্ত অবান্তর চিন্তা করা (যেমন-হাজবেন্ড আমাকে তাহাজ্জুদে জাগাবে,এখানে ওখানে ঘুরব,হাজবেন্ডের কাছে ইলম শিখব ইত্যাদি ইত্যাদি)। এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই হয়ে ওঠে না। যেমন- যে মেয়ের ৫ ওয়াক্তে নামাযেই ইহতিমাম নেই স্বামী তাকে কি তাহাজ্জুদে জাগাবে,সাংসারিক চাপে স্বামীর কাছে ইলম শেখার সুযোগ সুবিধা তেমন নাও হতে পারে আর নিজের দ্বীনের প্রতি উদাসীন থেকে একজন খুব দ্বীনদার কাউকে পেয়ে যাব এটাও সাধারণত হয় না। 

▪️পাত্র নির্বাচনের সময় কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখব?

মূল পয়েন্ট তিনটি-

১.দ্বীনদারিতা ও আখলাক। 

দ্বীনিদারিতার মধ্যে দুইটা বিষয় মাস্ট তার সাথে সুন্নাত,নফলে ইহতিমাম থাকলে আরও ভালো। সেই দুটি বিষয়-

ক.অন্তত ফরজ,ওয়াজিবগুলো পালন করে।

খ.হারাম থেকে বেঁচে থাকে। (গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট)

২.হালাল ইনকাম।

৩.কুফু মেইনটেইন। 

দ্বীনদার কিনা খোঁজ নেওয়ার কিছু টিপস:

১.ফেসবুক ওয়াল ঘুরে দেখা (ফেতনা যেন সৃষ্টি না হয়)। এ থেকে একটু ধারণা পাওয়া যেতে পারে তবে পুরোপুরি পাওয়া যায় না।

২.তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের থেকে খোঁজ নেওয়া। 

৩.শরয়ী দেখা সাক্ষাতের সময় সরাসরি কথা বলে নেওয়া।

আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু দেব,ইন শা আল্লাহ। বাকি আল্লাহ ভরসা,তাকদিরে যা থাকে।

▪️অনলাইন ভিত্তিক মেট্রিমোনিয়াল সাইটগুলোকে কিভাবে দেখা উচিত? যদি আমি এই সাইটগুলোর মাধ্যমে আগাতে চাই তাহলে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?

অনলাইন মেট্রিমোনিয়াল সাইটগুলো ভালো আর খারাপ দুটো দিকই আছে। তাই যাচাই করে নিতে হবে। কেউ যেন আমাকে ইউস করতে না পারে। ছবি দেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন।

▪️বিয়ের পরের অন্য পরিবারে অন্য পরিবেশে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে মাইন্ডসেট কেমন হওয়া উচিত? 

“মেনে নেওয়া,মানিয়ে নেওয়া”- মাইন্ডসেট হবে এমন। খাপ খাওয়ানোর মানসিকতা,ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। মাথায় রাখতে হবে সবকিছু আমার পরিকল্পনা মতো হবে না। তাই আমার অপছন্দের কিছু যদি শরীয়তের জায়েয পর্যায়ে থাকে সেক্ষেত্রে আমাকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

শ্বশুরবাড়ির কারো সাথে বিশেষ করে শাশুড়ী সাথে মনোমালিন্য হলে যদি তা সবরের সীমা পার করে তাহলে স্বামীকে হিকমতের সাথে বোঝাতে হবে। প্রথম থেকে অভিযোগ প্রবণ হওয়া যাবে না। তাহলে স্বামীও তা ভালোভাবে নেবেন না।

কোনো বিষয়ে ডিপ্রেশানে ভুগলে নিজের একটা দ্বীনি স্পেস তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে যেখানে সুকূন পাওয়া যায়। যেমন- তালিমে যাওয়া বা অনলাইনে নিয়মিত তালিমে বসা। দ্বীনের ব্যাপারে সবসময় যত্নবান থাকার চেষ্টা করতে হবে।

▪️বিয়ের পর অনেকের দ্বীনদারিতায় ধস নামে। এভাবে যদি হারিয়ে যায় তাহলে কিভাবে ট্র‍্যাকে ফিরে আসবে?

বিয়ের পর দ্বীনদারিতা একেবারেই হারিয়ে যায় তা কিন্তু না। বিয়ের পর যে  নতুন নতুন দায়িত্বগুলো আসে (যেমন- সংসার সামলানোর দায়িত্ব,রান্নাবান্না,বাচ্চাদের লালন-পালন ইত্যাদি) এগুলো যদি আমরা সহীহ নিয়তে করি তবে এগুলোও কিন্তু ইবাদত।

দ্বীনদারিতার ক্ষেত্রে ধস ঠেকাতে –

১.একটিভলি একটা দ্বীনি সার্কেলের সাথে থাকা।

২.বিয়ের আগের জীবনেই ইলম ও আমাল বাড়ানো। 

৩.স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে একজনকে অবশ্যই দ্বীনদারিতার হাল ধরে রাখতে হবে৷ বিশেষ করে স্ত্রীকেই এই হাল ধরা উচিত যে কেননা তাঁর হাতেই প্রজন্ম গড়ে উঠবে,তিনিই সংসারের দায়িত্ব পালন করেন। 

৪.স্বামী-স্ত্রী একে অপরের ভুল হিকমতের সাথে ধরিয়ে দেওয়া। এক্ষেত্রে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে না। “ডোন্ট জাজ মি,হু আর ইউ টু জাজ মি!” – এসব বলা যাবে না। ছোট ছোট গুনাহর কাজেও ছাড় না দেওয়া।

৫.সেল্ফ কাউন্সিলিং: একদিন আমার মৃত্যু হবেই। অতএব,মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতির ব্যাপারটা সবসময় খেয়াল রাখা। 

৬.ঘরোয়া তালিম করা। সম্ভব হলে অফলাইন তালিমে যাওয়া। (তালিমুন নিসা ঘরোয়া তালিম সম্পর্কে জানুন >তালিমুন নিসা ঘরোয়া তালিম

▪️স্বামীর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে কোন কোন কাজ করা উচিত? স্বামীর সাথে শিষ্টাচারের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? দাম্পত্য জীবনের ঝামেলা/মনোমালিন্যের মধ্যে সম্পর্কের ভারসাম্য কিভাবে রক্ষা করব?

স্বামীর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে করণীয় ও শিষ্টাচার:

১.পুরুষের সাইকোলজি জেনে-বুঝে নেওয়া। যেমন- স্বামীরা সাধারণত সম্মান প্রত্যাশী হয়। কোনো স্ত্রী স্বামীকে ছোট করলে আসলে স্বামীও বিষয়টি নিতে পারে না। 

২.তাঁর পছন্দের কাজগুলো করা।।

৩.আদব বজায় রাখা। বন্ধুর মতো হলেও তিনি কিন্তু পুরোপুরি বন্ধু না,তিনি পরিবারের প্রধান।

৪.ঝগড়ার সময় একজন রেগে গেলে আরেকজন চুপ হয়ে যাওয়া। 

৫.অযথা সন্দেহ না করা। নিজেও তাঁর বিশ্বস্ততা অর্জন করা।

৬.ছোট ছোট বিষয়ে তাঁর কেয়ার করা। তাকে প্রায়োরিটি দেওয়া।

৭.পরস্পর নির্ভরশীলতা টিকিয়ে রাখা। পুরুষ দায়িত্ব নিতে পছন্দ করে,দায়িত্ব পালন করতে পারলে তাঁরা খুশি হন। অতএব,স্বামীকে সেই স্কোপ দেওয়া। 

এছাড়া রাগারাগির কারণে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন না থাকা। বিচ্ছিন্ন থাকলে তিনি আমাকে ছাড়াই অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন,আমার উপর তাঁর নির্ভরশীলতা হারিয়ে যাবে।

মনোমালিন্যের সময় সম্পর্কের ভারসাম্য:

১.রাগারাগি,ঝগড়ার সময় চুপ হয়ে যাওয়া। 

২.মনোমালিন্যের সময় এমন কোনো কথা না বলা,এমন কোনো কাজ না করা যাতে পরে আমাকেই পোস্তাতে হবে। সীমার মধ্যে থাকা।

গুরুত্বপূর্ণ: ডিভোর্সের কথা ভুলেও মুখে না নেওয়া।

৩.আগে ‘সরি’ বলা। মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্লিয়ার করা।

৪.ঝগড়া হলেই হুট করে বাবার বাড়ি না যাওয়া কিংবা সাথে সাথে বাবা-মা,অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকে ফোন করে স্বামীর বদনাম না করা। 

৫.দীর্ঘ বা জটিল সমস্যার ব্যাপারে প্রফেশনাল,অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে কাউন্সিলিং বা পরামর্শ নেওয়া। 

▪️সাংসারিক জীবনে সবকিছু,সব খুঁটিনাটি অন্যদের সাথে বিশেষ করে নিজ বাবা-মা,ভাই-বোনদের সাথে শেয়ার করা কতটুকু যৌক্তিক?

ঘনিষ্ঠ মানুষগুলোর সাথে আমরা কিছু কিছু সুখ দুঃখ শেয়ার করতেই পারি। কিন্তু খুব নেগেটিভ কিছু বা খুব পারসোনাল কিছু শেয়ার করা যাবে না। এজন্য পরে পোস্তাতে হতে পারে। কখনও কখনও বিয়ে পর্যন্ত ভেঙে যেতে পারে। 

▪️নতুন সদস্যের জন্য নিজেকে মা হিসেবে কিভাবে প্রস্তুত করা যায়?

প্রস্তুতি:

১.আমি আমার সন্তানকে যেমন দ্বীনদার হিসেবে পেতে চাচ্ছি আমি তেমন দ্বীনদার কিনা? আমি নিজে আমার মা-বাবার কেমন সন্তান? এগুলো চিন্তা করে আত্মশোধনের চেষ্টা করা।

২.আদর্শ মা-বাবা হওয়া। সন্তানের জন্য রোল মডেল হওয়া।

৩.ঘরোয়া তালিম।

৪.প্যারেন্টিং নিয়ে পড়াশোনা করা। চাইল্ড সাইকোলজি বোঝা। 

৫.প্রেগন্যান্সি বিষয়ক পড়াশোনা করা। 

৬.দু’আ করে চেয়ে নেওয়া।  বিশেষ করে নাবী রসূল (আলাইহিমুস সালাম) -এর দু’আগুলোর প্রতি ইহতিমাম করা। এছাড়া নিজের ভাষায়ও চাওয়া।

৭.সন্তান নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে করতে  বেশি দেরি করে না ফেলা। 

▪️বিয়ের পর পারিপার্শ্বিক কারণে আমাদের উম্মাহকেন্দ্রিক ভাবনাগুলো কমে যায়। এক্ষেত্রে পরিত্রাণের উপায় কী? আমরা কিভাবে আবার উম্মাহ কেন্দ্রিক ভাবতে পারি?

মূল বিষয় হলো আমার দ্বীনের তাগাদা,দ্বীনের দাওয়াহ,দ্বীনের জন্য কাজ করা এটা কিন্তু এ উম্মাহর উপর সামষ্টিকভাবে ফারয আর আমাকে এই কাজটা নিজেকে বাঁচাতেই করতে হবে। আমার সাংসারিক কাজের মাঝেই সময় বের করে আমাকে দ্বীনের জন্য কাজ করতে হবে। যখন সন্তান বড় হবে,ঝুট-ঝামেলা কমবে তখন করব – এ ধরনের চিন্তা অবান্তর। আমার হায়াত কখন ফুরিয়ে যাবে তা তো আমি জানিই না। তাই দ্বীনের কাজের সাথে যতটুকু সম্ভব লেগে থাকতে হবে। আমি একটু শুরু করলে,আল্লাহ তা’য়ালা আরেকটু সহজ করে দেবেন ইন শা আল্লাহ। 

এ কাজগুলো আমার জন্য আখিরাতের ইনভেস্টমেন্ট,তাই দায়িত্ব মনে করে আমরা তা করে যাব ইন শা আল্লাহ। 

▪️আরও কিছু পয়েন্ট

বিয়ের ৫ টি স্টেইজ-

১.ভালোবাসা: প্রথমদিকে ভালোবাসা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

২.হানিমুন: ভালোবাসায় টইটম্বুর। আমরা যেসব নিয়ে ফ্যান্টাসিতে থাকি তা এই স্টেইজে পাওয়া যায়। যেমন- ঘুরতে যাওয়া।

৩.ঝগড়া: এই স্টেইজে ঝগড়া বিবাদ মনোমালিন্য শুরু হয়। অনেকে এই স্টেইজে শয়তানের ওয়াসওয়াসায় পড়ে – “আমি কি মানুষটা কে বিয়ে করে ভুল করলাম?”। এটা স্বাভাবিক। তাই এসময় সবর করতে হবে। হঠকারিতা করা যাবে না। 

৪.পুল আপ: ঝগড়া হয় কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয় না। একে অপরের সাথে মানিয়ে নেওয়া শুরু হয়।

৫.অটো পাইলট: সম্পর্কের পূর্ণতা থাকে এই স্টেইজে। যেমনটা আমরা আমাদের দাদা-দাদি,নানা-নানিদের মধ্যে দেখি একসময় তাদের কারও কারও সম্পর্কে অনেক ঝগড়া-বিবাদ,নেগেটিভিটি থাকলেও  এই স্টেইজে এসে তারা সবকিছুতে মানিয়ে নেন। একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারেন না।  আগের টানাপোড়েনগুলোও আর দেখা যায় না। তাই এই স্টেইজ পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাদেরকে সবর কর‍তে হবে। প্রতিটা স্টেইজেই প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে।

বিয়ে নিয়ে নেগেটিভি-

আমাদের মনে বিয়ে নিয়ে অনেক নেগেটিভিটি, ভয়ভীতি থাকে। বিয়ের পর এটা করতে হবে,ওটা করতে হবে। কিন্তু আমরা এগুলোও কে পাত্তা দিব না। বিয়ে একটি ইবাদত। এর মাধ্যমে আমরা নেকসন্তান লাভের সুযোগ পাই,যারা আমাদের মৃত্যুর পরও আমাদের জন্য দু’আ করবে। এছাড়া কেউ হতে পারে বাবার বাড়িতে ঠিকভাবে দ্বীন পালন করতে পারত না কিন্তু স্বামী দ্বীনদার হলে এই সমস্যাগুলো কেটে যায়। তাই,আমাদের মূল ফোকাস আমাদের মাকসাদে রেখে সবর ও শোকরের মাধ্যমে জীবনের পথ পাড়ি দিতে হবে। 

এক তরুণী এক বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করেছিল- “আপনাদের যুগে সম্পর্কগুলো এত সময় ধরে টিকেছে কিভাবে?”

বৃদ্ধার উত্তর ছিল – “আমাদের যুগে কিছু ভেঙে গেলে বা নষ্ট হলে আমরা তা মেরামত করতাম,কিন্তু তোমাদের যুগে তোমরা তা ফেলে দাও।”

সুবহানাল্লাহ! আমরাও সম্পর্ক মেরামত করব,ঠুনকো কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব না ইন শা আল্লাহ। 

সমাপ্ত

নোট কার্টেসি: পডকাস্টের সংক্ষিপ্ত নোট করেছেন  তালিম স্কুল শিক্ষার্থী তাসনিম চৌধুরী

তালিমুন নিসা

তালিম স্কুল (তালিমুন নিসা )

তালিম স্কুল ফেইসবুক গ্ৰুপ

Shopping Cart