
⭐⭐⭐সেরা দশকের প্রস্তুতি⭐⭐⭐:
জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০দিন নিয়ে আমরা আজকে কথা বলছি। আমরা যখন কোনো কাজের ফলাফলটা জানি তখন আমাদের জন্য ওই কাজটা প্রোডাক্টিভ ওয়েতে করতে পারা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। ওই রাস্তা গুলোতে হাঁটা সহজ হয়ে যায়। যদি আমি পুরস্কারের কথা না জানতাম হয়তো তা তুলনামূলক কঠিন হতো আমার জন্য। পুরস্কারের লোভে আমরা ওই পথগুলো খুব সহজেই অতিক্রম করতে পারি। পূর্ণ উদ্যম কাজ করে আমাদের মধ্যে। এ কারণেই শুরুতে আমরা জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের ফযীলত নিয়ে জানবো ইন শা আল্লাহ।
▪ ফযীলত:
আমরা অলরেডী জানি যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশটা দিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ১০ দিন এবং আল্লাহ তাআলার কাছে খুব খুব খুব বেশি প্রিয়। এই দশটা দিনের প্রত্যেকটা ঘণ্টা, প্রত্যেকটা মিনিট আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে অনেক প্রিয়।
“সূরাতুল ফাজরে” আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই দশ দিনের ওপর শপথ করেছেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সাধারণত খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না হলে কিংবা অত্যন্ত পবিত্র কোনো বিষয়বস্তু ছাড়া তিনি কসম করেন না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা “সুরাতুল ফাজর” এ বলেছেন,
“ওয়াল ফাজর। ওয়ালা ইয়া লিল আশর্ “
◼️আল্লাহ তায়ালা জিলহজ্ব এর এই ১০ দিনের ব্যাপারে যে শপথ করলেন। এই ব্যাপারে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও বলেছেন ।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এরকমই কোন মজলিশে সাহাবীদেরকে জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০টা দিনের ফযীলাত সম্পর্কে বলছিলেন ৷ তিনি বলেন,
“বছরের অন্যান্য দিনের কৃত আমল ততোটা প্রিয় নয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে যতটা প্রিয় “আইয়ামে আশর“তথা জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের নেক আমল। “
জিলহজ্জের প্রথম দশটা দিনের নেক আমল আল্লাহ তাআলার কাছে এত বেশি প্রিয় যে, বছরের অন্যান্য দিন কোনো ব্যাক্তি যেসব আমল করে সেগুলো তুলনামূলক ভাবে জিলহজ্ব এর এই দশ দিনের আমলের চেয়ে খুব বেশি প্রিয় নয়।

এই হাদীস শুনে সাহাবাগণ প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও কি এর চেয়ে উত্তম হবে না, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে এর চেয়ে প্রিয় হবে না?
তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে কি বললেন? তিনি বললেন,
“আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও এই দশ দিনে করা আমলের সমতুল্য হবেনা। তবে কেউ যদি জান ও মাল নিয়ে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয় এবং জিহাদের ময়দানে জান 喝ও মাল উভয়ই হারায় তাহলে তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে জিলহজ্ব এর করা আমলের চেয়েও অধিক প্রিয় হবে।
এই হাদিসটাতে আমরা একটু লক্ষ্য করি, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিন্তু কি বলেছেন , জিহাদের ময়দানে শুধুমাত্র প্রাণ হারানোর কথা বলেননি কিংবা শুধুমাত্র জিহাদের ময়দানে সম্পদ হারানোর কথা বলেন নি বরং বলা হয়েছে জান এবং মাল উভয়ই হারানোর কথা। অর্থাৎ শুধুমাত্র জান হারালেও চলবে না, শুধুমাত্র প্রাণ হারালেও চলবে না। বলা হয়েছে যে এ দুটোই হারায়। যে এ দুটো সত্যিই হারিয়ে ফেলে অর্থাৎ সে প্রাণ ও হারালো, নিজের যত সম্পদ আছে সবকিছু হারিয়ে ফেললো তাহলে ওই ব্যক্তির আমল (জিহাদ) এই দশ দিনের আমলের চেয়ে ও উত্তম আমল হিসাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে গণ্য হবে।
▪️এই হাদিসের রিভার্স যদি বলি, একজন সালাফ ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ:) এই কথাটাকে আমাদের জন্য আরো সহজভাবে উপস্থাপন করে গেছেন। সেটা কিভাবে? জিলহজ্জের প্রথম দশটা দিন কোনো ব্যক্তি যদি একনিষ্ঠভাবে, ইখলাসের সাথে দিন রাত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদাতে মগ্ন থাকে ওই জিহাদের চাইতে ও উত্তম যে জিহাদে জান ও মাল কোনোটাই বিনষ্ট হয়নি।
তাহলে আল্লাহ তাআলা , আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আমাদের যে সালাফগণ আছেন উনাদের কথা থেকে এতটুকু তো স্পষ্ট যে, স্বাভাবিকভাবেই একটা জিহাদে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে যতটুকু শক্তির প্রয়োজন হয়, এবং যতটুকু শক্তির প্রয়োজন হয়, যাওয়ার পরে যে ব্যক্তি জান এবং মাল হারায় তাঁর আমলটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে প্রিয়। কিন্তু কেউ কেবল একটা হারায় শুধুমাত্র জান কিংবা শুধুমাত্র সম্পদ তার চেয়েও আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয় হবে এই দিনগুলো যদি আমরা উত্তম নেক আমলের মাধ্যমে দশটা দিন সাজাতে পারি ইন শা আল্লাহ।
আরো একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী আনাস ইবনে মালেক (রা:) , উনি বলেন যে,
“(জিলহজ্ব এর প্রথম দশটা দিন এর ব্যাপারে) এর প্রত্যেক টা দিন এক হাজার দিনের সমান। আর আরাফার দিবস সেটা তো দশ হাজার দিনের সমান”
তাহলে এতো গুরুত্বপূর্ণ , এত মর্যাদামন্ডিত এই দশ দিনকে আমরা কিভাবে স্বাগত জানাবো (আমাদের সামনে আগত)?

আমাদের ঘরে যখন কোনো মেহমান আসে যিনি কিনা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অনেক বেশি দামী মূল্যবান । যাকে উছিলা করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আরো কাছাকাছি যেতে পারি আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকে খুশি করতে পারি। তখন ঐ মেহমানকে আমরা কিভাবে স্বাগত জানাবো? কিভাবে আদর আপ্যায়ন করবো? মেহমান আসা উপলক্ষে আমার কি কি প্রস্তুতি থাকবে?
এটা যদি আমরা আমাদের দুনিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে তাকাই তাহলে দেখা যায় কি মেহমান আসার আগে আমরা নিজেদের ঘরদোর পরিষ্কার করি, ঘরটাকে সাজাই। কি কি রান্না করবো প্ল্যান করি, প্রস্তুতি নেই। মেহমান বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলে আমাদের প্রস্তুতিও ও সে অনুপাতেই হয়।
তাহলে এই যে জিলহজ্ব এর প্রথম দশক আসতে যাচ্ছে এই দিন গুলোকে ঘিরে আমার আসলে কি কি প্রস্তুতি থাকবে? সেটা নিয়ে আমরা আজকে আমাদের পরিকল্পনা শুরু করতে যাচ্ছি ইন শা আল্লাহ।
এই পরিকল্পনাকে আমরা টোটাল দুইটা ভাগে ভাগ করবো।
১. আমরা জিলহজ্ব এর প্রথম দশক কে কিভাবে স্বাগত জানাতে পারি?
২. জিলহজ্ব এর এই ১০টা দিন আমরা কিভাবে কাটাতে পারি, (কোন কোন নেক আমল বা কাজের মাধ্যমে)
১. আমরা আইয়ামে আশর তথা জিলহজ্ব এর প্রথম দশটা দিনকে কিভাবে স্বাগত জানবো?
এটাকে আমরা আবার কয়েকটা ভাগে ভাগ করতে যাচ্ছি।
▪ প্রথমমত:
“আইয়ামে আশর “কে আমরা স্বাগত জানাবো প্রথম যে পদ্ধতিতে সেটা হলো, তাওবা।

একটু চিন্তা করি, একটা গুনাহে ঠাসা মানুষ যার অন্তর কিনা গুনাহের কালো ছোপ ছোপ দাগে পরিপূর্ণ হয়ে আছে, সেই মানুষটার অন্তরে একই সাথে পবিত্র কোনো জিনিস কি অবস্থান করতে পারবে? অবশ্যই না।
আমরা জানি যে পবিত্র এবং অপবিত্র জিনিস কখনোই সহবস্থান করতে পারেনা, কখনোই একসাথে থাকতে পারে না।
সুতরাং যার মনমেজাজ, যার খেয়াল, যার চিন্তা চেতনা, যার অন্তরটা গুনাহের চিন্তা দিয়ে ভরা, ভুল ত্রুটি দিয়ে পরিপূর্ণ, তো সেই মানুষটাকে সর্বপ্রথম কোনো কাজ করতে হবে?
সর্বপ্রথম তাকে তার ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং গুনাহের যে দাগ গুলো অন্তরে লেগে গিয়েছে সে দাগ গুলোকে মুছে ফেলতে হবে।
এখন এই দাগ কিভাবে মুছবে? আমরা জানি কিন্তু, এই দাগ কেবলমাত্র তাওবার মাধ্যমেই মুছে যায়। গুনাহের কালো দাগ, অন্তরে লেগে থাকা গুনাহের কালো দাগ কেবল মাত্র তাওবার মাধ্যমেই মুছে যায়।
আমাদেরকে সেই তাওবার অশ্রু দিয়ে আমাদের ভেতর বাহির আমাদের অন্তরটা কে পূতপবিত্র করতে হবে ইনশাআল্লাহু তাআলা। এবং এইযে বিগত দিনগুলো বিগত বছরগুলো, আমি যা কিছু করেছি, এতোদিন আমার যা কিছু ভুল ছিলো, যে ভুল পথগুলোতে আমি হেঁটেছি, যে অন্যায় করেছি নিজের সাথে নিজের নাফসের সাথে অন্যের হক নষ্টের মাধ্যমে, আমাকে এই সবকিছু থেকে, সবভুল , সবগুনাহ থেকে ,সব খারাবি থেকে ফিরে আসতে হবে। আমাকে তাওবা করতে হবে। এইজন্য আমাদের প্রথম কাজ হলো, আমরা তাওবা করবো।
এক্ষেত্রে আমরা প্রথমত আমাদের যে বড় বড় কবীরাহ গুনাহ আছে, যেগুলোতে আমরা অভ্যস্ত সেগুলো আমরা নোট ডাউন করে রাখতে পারি।
আমার হয়তো গান শোনার অভ্যাস আছে, আমি হয়তো হারাম সম্পর্কে আছি, আমি বাবা মার প্রচন্ড অবাধ্য, আমি মানুষের আমানতের খিয়ানত করছি এরকম যত কবীরাহ গুনাহ আছে আমি প্রথমে সেগুলোকে লিস্ট করে ফেলি যে এগুলো আমার অভ্যাস এ আছে। আমি সর্বপ্রথম ওই প্রত্যেকটা গুনাহ থেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে তওবা করবো। শুধুমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে তওবা নয়। যে গুনাহগুলো বান্দার হকের সাথে সংশ্লিষ্ট আমি যেনো অবশ্যই অবশ্যই তাদের থেকে ক্ষমা পাইয়ে নেই এই চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহু তাআলা। এবং আল্লাহর হকের সাথে সংশ্লিষ্ট সেগুলোর জন্য আমি আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে, প্রচন্ডরকম অনুতাপ নিয়ে যেন আমি তাওবা করতে পারি। ইন শা আল্লাহু তাআলা আমার সেই চেষ্টা থাকবে। এই আমরা এতো এতো প্ল্যান সাজাতে বসেছি, আমরা ভাবছি কি কি আমল করবো, কিংবা কুরআনের কতটুকু পড়বো, সালাত কতটুক পড়বো?
সবকিছু আসলে তাওফীকের ওপরে নির্ভর করে। এবং যে ব্যক্তি গুনাহগার, গুনাহগার ব্যক্তির জন্য এটা একটা শাস্তি, গুনাহের ফলাফল বা কুফল এইটা একটা যে তাকে নেক আমলের তাওফীক থেকে বঞ্চিত করা হয়।
আমার এতো প্ল্যান আসলে বৃথা
হয়ে যাবে যদি না আমি তাওবা করি যদি না আমি গুনাহ থেকে মাফ না পাইয়ে নেই।
সুতরাং আমাকে আগে তাওবা করতে হবে।
▪ দ্বিতীয় ধাপে:
আমার দ্বিতীয় যে করণীয় সেটা হচ্ছে দুআ করা। কিসের দুআ করবো?

আমরা তাওফীক চেয়ে দুআ করবো। কিসের তাওফীক? জিলহজ্ব এর প্রথম দশক আসতে এখনও কয়েকটা দিন বাকি ।আমার হায়াত কি আসলে আছে যে পরবর্তী ঘণ্টাতেও আমি জীবিত থাকবো? আমি কতক্ষন জীবিত থাকবো আমি জানি ?বা আমি নিশ্চিত না। কিংবা এই দশটা দিন আমি যে পরিপূর্ণভাবে পাবো সেটাও তো আমি নিশ্চিত না। সুতরাং আমি যে নেক আমল করতে চাচ্ছি, আল্লাহ তাআলার প্রিয় হতে চাচ্ছি উনার নিকটবর্তী হতে চাচ্ছি, আমি চাচ্ছি যে জাহান্নাম থেকে নাজাত পেতে, আমি চাচ্ছি জান্নাতে পৌঁছে যেতে, এই সব কিছু তখনই
সম্ভব যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের উপর রহম করে আমাদেরকে তাওফীক দিবেন ইন শা আল্লাহু তাআলা। এইজন্য দ্বিতীয় ধাপে আমরা আল্লাহ তাআলা কে বলবো,
ইয়া রব! আপনিতো পবিত্র। এবং এই যে পবিত্র দিন গুলো, উত্তম দিন গুলো আসছে, আপনি আমার হায়াত নসিব করুন। ততদিন আপনি আমাকে জীবিত রাখুন। আমাকে তাওফীক দিন আমি যেনো এই দামী দিন গুলো ইবাদাতে গুজার করতে পারি। এই দিন গুলোতে আমি যেনো মন ভরে ইখলাসের সাথে আমল করতে পারি, আমি যেনো প্রাণভরে দুআ করতে পারি। আমি যেনো আমার আমলে সালেহ্ বাড়াতে পারি, আমি যেনো হাশরের ময়দানে মিজানের পাল্লা ভারী করতে পারি এই দিন গুলোর উছিলাতে। ইয়া রব! আপনি আমাকে সেই তাওফীক দান করুন।
এবং আমরা এই দুআটাও করতে পারি ,
“আল্লাহুম্মা আ’ইন্নি ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক “
▪ তৃতীয়তঃ
যে উপায়ে আমরা জিলহজ্ব কে স্বাগত জানাতে পারি সেটা হচ্ছে ,
সুন্দর একটা পরিকল্পনা গোছাতে হবে আমাদেরকে, এই দশদিনে আমরা কি কি করবো, কিভাবে কাটাবো ইন শা আল্লাহু তাআলা। অর্থাৎ এই দশ দিনে আমার একটা রোড ম্যাপ থাকবে।
(যে ধাপের কাজটা আমরা করে ফেলতে পারবো সেটা তে আমরা একটা টিক দিয়ে রাখতে পারি (খাতায় লিখে)
যেমন:
✅তাওবা
✅দুআ
✅পরিকল্পনা)
করণীয়:
করণীয় আমল ১ (নিয়াত):
আমাদেরকে একটা সুন্দর নিয়াতের সাথে পরিকল্পনা করতে হবে এবং জিলহজ্ব এর যে দশটা দিন আমরা কাটাবো, সেই দশটা দিনের প্রতিটা দিন যেনো আমার একটা সুন্দর নিয়াত থাকে, প্রতিটা কাজের শুরুতে, প্রতিটা আমলের শুরুতে, প্রতিটা দিনের শুরুতে সুন্দর একটা নিয়াত থাকে। আমি একটা পরিশুদ্ধ হৃদয়ে, পরিশুদ্ধ মনে আমার এই জিলহজ্ব এর জার্নি শুরু করতে যাচ্ছি, সেরা এক দশকের জার্নি শুরু করতে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ তাআলা।
▪️আমরা জানি যে, নিয়াতের কারণে খুব সাধারণ কাজ, তুচ্ছ একটা কাজ ও অনেক অনেক বেশি দামী হয়ে যায়। এজন্য প্রত্যেকটা কাজ করার আগে আমাদেরকে অবশ্যই নিয়াত চেক করে নিতে হবে। আমি কেনো করছি?
▪️এই যে আমরা সবাই একসাথে বসে প্ল্যান সাজাচ্ছি, কেনো করছি এটা? সবাই করছে, তালিমুন নিসা পাঠশালা ওয়েবিনার আয়োজন করছে কিংবা আমি একটা দ্বীনী সার্কেল মেইনটেইন করি সে সার্কেল এর সবাই পরিকল্পনা করছে এজন্য আমিও করছি ব্যাপারটা কি এরকম?
না। বরং আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকটবর্তি হতে , উনার সন্তুষ্টি পেতে এবং নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে এই প্ল্যানিং করতে বসেছি।
আগামী দশটা দিন এবং আজীবন আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন আমার সমস্ত কাজ হবে কেবল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য।
করণীয় আমল ২:(সালাত🙂
আমি আমার সালাতটাকে গুছিয়ে ফেলবো। আমার ফরয, ওয়াজিব যে সালাতগুলো আছে সেগুলো সুন্দর এবং পরিপূর্ণভাবে আদায় করতে চেষ্টা করবো। আমি চেষ্টা করবো যতটুকু সময় আমি আমার সালাতে দিবো ততটুকু সময় যেনো পরিপূর্ণ খুশুখুজু মেইনটেইন করতে পারি ইনশাআল্লাহ তাআলা। আমি পরিপূর্ণ আদব সহকারে, সুন্নাত মুস্তাহাব সহকারে এ ফরয সালাত গুলো আদায় করতে চেষ্টা করবো, ওয়াজিব এবং সুন্নাহ গুলো আদায় করতে চেষ্টা করবো।

◼️পাশাপাশি চেষ্টা করবো যেনো নফল সালাত গুলো ও আমি আদায় করতে পারি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নৈকট্য লাভের সর্বোত্তম মাধ্যম হলো সালাত। নফল সালাত দিয়ে দেখা যায় আমাদের আমল নামার অধিকাংশ ভারী হয়। সুতরাং এই কয়টা দিন আমরা ফরয এবং সুন্নাত শেষে নফল এর দিকেও মনোযোগী হবো ইন শা আল্লাহু তাআলা। আমাদের মধ্যে থেকে অনেকেই হয়তো রমাদানে কিয়ামুল লাইল আদায় করেছিলেন। কেউ কেউ হয়তো পুরো ৩০টা দিনের প্রতিটা দিনই কিয়ামুল লাইল এর সালাত আদায় করেছেন । কিন্তু দেখেন রমাদান চলে গিয়েছে, তার পর রমাদানের পরে পর পর দুটো মাস চলে যাচ্ছে, আপনার কিয়ামুল লাইল এ একটা ভাটা এসছে। এই দশটা দিন আপনার সেই অভ্যাসটাকে পুনরায় ফিরিয়ে পাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। আপনি এই সম্ভাবনাটাকে কাজে লাগান। কিয়ামুল লাইল এ আবার নিয়মিত হতে চেষ্টা করেন। যারা নিয়মিত না, তারা চেষ্টা করি অন্ততপক্ষে এই দশটা দিন নফল সালাত হিসেবে কিয়ামুল লাইল আদায় করতে পারি। ফজরের ফরয সলাতের পর আমরা চট করে ঘুমিয়ে যাই। আমরা এটা করবো না। আমরা চেষ্টা করবো ফরয সলাতের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত জেগে থেকে অপেক্ষা করতে, যিকির আজকার করতে এবং সূর্যোদয় এর পর ইশরাকের সালাত আদায় করতে। আমরা তো জানি যে সালাতুল ইশরাকের কতো বড় ফযীলত।
আনাস ইবনে মালেক (রা:) বলেন,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যাক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায় করল এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে বসে থাকলো। অতঃপর দুই রাকাত নামায আদায় করল সে একটা পরিপূর্ণ হজ্ব ও ওমরাহর সওয়াব পাবে ।”
আমাদের অনেকেরই হয়তো সেই তাওফীক হয়ে ওঠেনি যে জিলহজ্ব এ আমরা হজ্ব করতে যেতে পারছি কিংবা ওমরাহতে যেতে পারছি। কিন্তু আমাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এতো বড় একটা সুযোগ দিয়েছেন, আমরা এই সময়টাকে কাজে লাগাই । ফজরের পর না
ঘুমিয়ে, আমার ঘুমটাকে কিছুটা স্যাক্রিফাইস করে আমি সালাতুল ইশরাক আদায় করতে পারি।
আপনি এই প্ল্যানটা সাজান যে, আমি কোন কোন নফল সালাত গুলো আদায় করবো। লিখতে পারেন আওয়াল ওয়াক্তে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা সুন্নাতের সাথে এবং সালাতের পরে যে নফল গুলো সাধারণত আমাদের পড়া হয়না, অনেকেই তাড়াহুড়োয় সেগুলো মিস করে যাই, আমরা চেষ্টা করবো সেই নফল গুলোর দিকেও মনোযোগী হতে ইন শা আল্লাহু তাআলা এবং পাশাপাশি কিয়ামুল লাইল, সালাতুল ইশরাক, সালাতুল চাশত এই যে নফল সালাত গুলো আছে এগুলোর প্রতিও যতটুক সম্ভব যত্নবান হতে। আমরা যেন এই সুযোগটা মিস না করি। এইকয়টা দিন যেন আমরা নফল সালাত এর দিকে মনোযোগী হতে পারি।
করণীয় আমল ৩(সিয়াম পালন করা:)
জিলহজ্ব এর প্রথম দশকের অন্যান্য নেক আমলের মধ্যে সিয়াম হলো অন্যতম । এই দিন গুলোতে খুব যত্নসহকারে যেন সিয়াম পালন করা হয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনে এই চারটা আমল কখনো পরিত্যাগ করেন নি:
◼️আশুরার সাওম,
◼️জিলহজ্ব এর ৯ দিনের সাওম ,
◼️প্রত্যেক মাসের তিন দিনের সাওম,
◼️ফজরের পূর্বের দুই রাকাত সালাত।
এইখানে প্রথম দুইটা আমল যদি আমরা খেয়াল করি, সেটা হচ্ছে আশুরার সাওম এবং জিলহজ্ব এর দশ দিনের সাওম। সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি আল্লাহর রাসূলের জীবনে এই দুই সাওম কখন ও পরিত্যাগ করেননি। আমরা যেন আল্লাহর রাসূলের এই সুন্নাহকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে পারি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সেই তাওফীক দিন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আর একটি হাদীসে তিনি বলেন,
যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখবে, এই একদিন রোজার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার চেহারাকে জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ খারিব দূরে রাখবে ।
সুতরাং আমরা যেন এই দশটা দিন সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো সিয়াম পালন করার ইন শা আল্লাহু তাআলা।
করণীয় আমল ৪🙁জিকির )
আমরা একটা খাতা বানাতে পারি। সেখানটাতে আমরা প্ল্যান করবো, আমি এই দশটা দিন প্রতিটা দিন কোন কোন জিকিরগুলো করবো। আমরা প্রথমে জিকিরের নামগুলো লিখতে পারি। এবং পরবর্তীতে আমি একটা সংখ্যা লিখতে পারি সর্বনিম্ন সংখ্যা, সেটা কারো জন্য হতে পারে ৩০বার, কারো জন্য ১০০বার, কারো জন্য হতে পারে ১০০০বার। আপনি আপনার সামর্থ্য ও সাধ্য অনুযায়ী একটা প্ল্যান করতে পারেন।

কোন কোন জিকির গুলো আমরা করতে পারি?
অধিকাংশ আলেমের মতে একটা আয়াতের ভিত্তিতে, সেই আয়াতটা হলো যেখানে আল্লাহ তাআলা বলেন,
“যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে। এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিন সমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।”
অধিকাংশ আলেমগণ বলেছেন এই আয়াতে নির্দিষ্ট দিন বলতে জিলহজ্ব এর প্রথম দশটা দিনকে নির্দেশ করা হয়েছে। এই সময়ে আল্লাহর বান্দাগণ বেশি বেশি তাঁর প্রশংসা করে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে, তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে।
হাদীসে এসেছে,
আল্লাহ তাআলার কাছে চারটা বাক্য অনেক বেশি প্রিয়। কোন চারটা বাক্য?
সুবহানাল্লাহ
আলহামদুলিল্লাহ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
আল্লাহু আকবার
এই চারটা বাক্য। এই যে চারটা জিকির, এই চারটা জিকির দিয়ে জিলহজ্ব এর দশটা দিন আমরা সাজাতে পারি। যেন আমার ক্বলব, আমার জবান এই চারটা জিকিরে ব্যস্ত থাকে এটা আমরা নিশ্চিত করতে পারি।
যে খাতায় আপনি আপনার প্ল্যান সাজাবেন, ওই খাতায় এর পাশাপাশি আপনি আরও কোন জিকির রাখতে পারেন, দরুদ এর জিকির রাখতে পারেন, অন্যান্য আরো অনেক ফযীলত পূর্ণ জিকির আছে সেগুলো পাশাপাশি লিখতে পারেন। লিখে পাশে একটা সর্বনিম্ন সংখ্যা লিখতে পারেন যে দৈনিক আমি এই জিকিরটা এতবার করবো। সর্বনিম্ন এই সংখ্যাটা আপনি চেষ্টা করবেন এটা আপনার টার্গেট হিসেবে রাখার এবং এটা ক্রস ওভার করার।
করণীয় আমল ৫ (কুরআন )
তারপর আপনি আপনার কুরআন প্ল্যান সাজাতে পারেন। কুরআন প্ল্যান কি?
আপনি আপনার আসন্ন দশটা দিন, জিলহজ্ব এর প্রথম দশক আপনি কিভাবে কাটাবেন। আপনি চেষ্টা করবেন এই দশটা দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার যেহেতু প্রিয় এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম একটা পদ্ধতি হচ্ছে নফল সিয়াম পালন করা, নফল সালাত আদায় করা, নফল ইবাদাত গুলো করা, এগুলো আল্লাহর পছন্দনীয় উপায়। এবং সমস্ত নফল ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম আমল হচ্ছে কি? কুরআন তিলাওয়াত।

এই দশটা দিন যেন এরকম না হয় যে, জিলহজ্ব এর দশ দিন চলে গেলো অথচ আমি কুরআনের পাতাটা ও উল্টিয়ে দেখলাম না। আমি চেষ্টা করবো এই দশটা দিন কুরআন থেকে তিলাওয়াত করার, কুরআনের কিছু অংশ তাফসীর পাঠ করার, অল্প হলেও হোক সেটা এক আয়াত হিফজ করতে চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহু তাআলা।
তো এরকম করে আপনি আপনার প্ল্যান সাজাতে পারেন যে আমি প্রতিটা দিন কত আয়াত তিলাওয়াত করবো, কত আয়াত হিফজ করবো, কতটুকু অংশ তাফসীর পড়বো, কোন সময়টাতে পড়বো, সলাতের পর না ফজরের পর নাকি মধ্য রাতে, দিনের কোন অংশগুলোতে, রাতের কোন অংশগুলোতে আমি তিলাওয়াত করবো এবং কোন কোন জায়গা থেকে তিলাওয়াত করবো এইটা একদম নির্দিষ্ট করে করে প্ল্যান করে রাখবো। যখন প্ল্যানটা নির্দিষ্ট থাকবে, টার্গেট/লক্ষ্য যখন নির্দিষ্ট হয় তখন ওইটাকে অর্জন করা খুব সহজ হয়।
দেখা যায় কি আমরা একটা অনির্দিষ্ট প্ল্যান করি। কখন ও নির্দিষ্ট করিনা আমি যে কখন পড়বো, কতটুকু পড়বো, কোন জায়গা থেকে পড়বো, এই জিনিসগুলো আমরা নির্দিষ্ট করিনা। এই জিনিসগুলো আমরা নির্দিষ্ট করে নিবো ইন শা আল্লাহু তাআলা। যেই খাতায় আপনি আপনার প্ল্যান সাজাচ্ছেন সেই খাতায় আপনি লিখে রাখবেন, আপনি হিফজ করবেন কতটুকু, তিলাওয়াত করবেন কতটুকু, কতটুকু তাফসীর থেকে পাঠ করবেন ইন শা আল্লাহু তাআলা। এই গেল আমাদের কুরআন তিলাওয়াত নিয়ে প্ল্যান।
করণীয় আমল ৬ (সাদাকাহ:)
সুবহানাল্লাহ! এখন এমন একটা সময় যাচ্ছে যখন পুরোবিশ্বে একদল মানুষ কিংবা আমরা বলবো যে হাতেগোনা কিছু মানুষ দিন থেকে আসলে ধনী হয়ে যাচ্ছে এবং কিছু মানুষ দেখা যাচ্ছে যে সামর্থ্য সম্পদের অভাবে আসলে একদম হাবুডুবু খেতে যাচ্ছে। তো আমরা একটু খুঁজে খুঁজে নিজের আত্মীয়দের মধ্যে থেকে হোক, কিংবা পরিচিতদের মধ্যে কিংবা দ্বীনী বোনদের মধ্য থেকে, দ্বীনী সার্কেল এ হোক, এই মানুষগুলোকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো। সাদাকাহ র অনেক গুলো মাধ্যম আছে। এই যে আমরা কোন মুসলিমের সাহায্যে আসা এটা যেমন একটা মাধ্যম , একইভাবে গাছ লাগানো, পশুপাখিকে পানি খাওয়ানো…, প্রতিটি সাদাকাহের মাধ্যম। এই দিনগুলোতে আপনি কিভাবে সাদাকাহ করবেন, আপনি যদি অনলাইন এ সাদাকাহ করেন তাহলে এই দশদিনের আগেই আপনি আপনার মোবাইল একাউন্ট এ ক্যাশইন করে রাখতে পারেন।
যদি অফলাইন এ সাদাকাহ করতে চাই সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের সাদাকাহ বক্সে কিছু অর্থ আলাদা করে রাখতে পারি। প্রতিটা দিন এখান থেকে আমি অল্প অল্প করে সাদাকাহ করবো ইন শা আল্লাহু তাআলা। আমাদের যে কাপড় গুলো পুরনো কিংবা আমরা চাচ্ছি কোনো বোনকে দিয়ে দিতে , কারো সাহায্যে যেন আসে, কিংবা খুব সুন্দর কিছু কাপড় পড়া হয়না রয়ে গেছে, আমি চাচ্ছি যে এই জিনিসগুলো দেয়ার মাধ্যমে আমি যাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে সওয়াব হাসিল করতে পারি কিংবা এই কাজটার মাধ্যমেই আমি আসলে নাজাত পেতে চাই তাহলে এরকম করেই এই জিনিসগুলো যেগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত এগুলোও আলাদা আলাদা করে রাখতে পারি সাদাকাহর জন্য ইন শা আল্লাহু তাআলা। এগুলো আমরা এভাবে সাইড করে ফেলতে পারি ইন শা আল্লাহু তাআলা।
এইটা হচ্ছে আমাদের অগ্রিম একটা প্রস্তুতি।
করণীয় আমল ৭ (দুআ করা )
সর্বশেষ এবং শুধুমাত্র সর্বশেষ না। এইটা আমরা শুরুতেও বলেছি। এই অংশটাকে এখন আমরা শেষেও এনেছি সেটা হচ্ছে দুআ করা।

দেখেন, জিলহজ্ব এর এই দশ দিন এমন একটা দিন আনছে যে দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এতো এতো পরিমাণ মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যে শয়তান তার হাত কামড়াতে থাকে যে সে কি করলো, সে কি করলো! কাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এদিনে মুক্তি দেন?
যারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে নাজাত চায়, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চায়।
সুতরাং আপনাকে চাইতে হবে। আপনাকে দুআ করতে হবে। রমাদানে আমরা একটা দুআর লিস্ট সাজিয়েছি না? তেমনি করে আমরা এ জিলহজ্ব এর জন্য একটা দুআর লিস্ট সাজাবো ইন শা আল্লাহু তাআলা।
আমাদের নিজেদের যা কিছু প্রয়োজন,দুনিয়ার, আখিরাতের, পারিবারিকভাবে, ব্যক্তিগত, সমস্ত দুআ গুলো আমরা লিস্ট আকারে সাজাবো ইন শা আল্লাহু তাআলা। এবং সেগুলো থেকে আমরা প্রতিটাদিন দুআ কবুলের ওয়াক্তগুলো বেছে বেছে, সময় আলাদা করে করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে দুআ করবো প্রতিটা দিন। আমাদের যা কিছু চাওয়া যা রমাদানে হয়তো চেয়েছি এখনও ওই লিস্টগুলো, রমাদানের ওই লিষ্টগুলো আমরা কাজে লাগাতে পারি। হাইলাইট করে নিতে পারি যে এই এই দুআ গুলো করবো। কিংবা নতুন করে একটা লিস্ট বানাতে পারি। সবচেয়ে ভালো হয় নতুন করে একটা লিস্ট বানানো ইন শা আল্লাহু তাআলা।
আমরা অনেকেই হয়তো গুছিয়ে দুআ করতে পারিনা, কি চাইবো বুঝে উঠতে পারিনা কিংবা কোনো দুআ ছুটে গেলো কিনা কোনোটা বাকি রয়ে গেলো কিনা এরকম হয় আসলে। কিংবা একদম আন্তরিক হয়ে নিজের ভাষাতে সুন্দর করে গুছিয়ে দুআ করতে পারা কিংবা দুআর একটা লিস্টই তৈরি করা গুছিয়ে এইটা অনেকের হয়ে ওঠেনা। সেটা হোক ব্যাস্ততার কারণে কিংবা নিজস্ব কোনো
সীমাবদ্ধতায়। তো তাদের জন্য একটা সহজ সমাধান হতে পারে যে “তালিমুন নিসার ” “আসমানী খামে আমার দুআ”বইটা। এ পর্যন্ত যারাই নিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ।তাদের ফিডব্যাক এইটা ছিলো যে,
এটা এমন একটা দুআর বই যেটাতে মোটামুটি ৯০%বা ৯৯%দুআ কাভার হয়ে গিয়েছে। এটা বোনদের ফিডব্যাক। সুতরাং আপনার চাইলে এই বইটা নিয়ে এটা থেকেও দুআ করতে পারেন। খুব ছোট্ট, পাতলা একটা বই। এমনকি বাইতুল্লাহর সফরে যারা গিয়েছেন অনেকেই এই বইটাকে সংগী করে নিয়েছেন যাতে করে অল্প সময়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে একদম সবকিছু চেয়ে নেয়া যায়, এছাড়াও মোটামুটি সবকিছু চেয়ে নেয়া যায় নিজের দুনিয়া এবং আখিরাতের জন্য। আমাদের প্ল্যানতো সাজানো হলো , আমাদের করণীয়গুলো তো গেলো আলহামদুলিল্লাহ যে আমরা এই এই নেক আমল গুলো করবো, মনের মধ্যে তো, তাইনা ?আমরা একটা নিয়াত বানিয়েছি যে আমরা এই এই আমল গুলো করবো।
কিন্তু এরকম একটা কথা আছে জানেন,
যদি জাহান্নামে যাওয়ার যে রাস্তাগুলো সে রাস্তাগুলো যদি আমি বন্ধ করতে পারি তাহলে জান্নাতে যাওয়া আমার জন্য সহজ হয়। এখন হঠাৎ করে এই কথা বলার কারণ কি?
কারণটা হচ্ছে, এই নেক আমল গুলো করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে চাই । এইটাইতো আমাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। বলতে পারি যে আমাদের মূল গন্তব্য। তাইনা? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকে রাজি খুশি করে জান্নাতে পৌঁছে যাওয়া।
তো সেই জান্নাতে পৌঁছে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের শত্রু আছে? সে কে? শয়তান। সে আমাদেরকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে দিয়ে, আমাদের নাফসকে প্ররোচনা দিয়ে দিয়ে সে কি করে?
আমাদেরকে দিয়ে গুনাহের কাজ করায় এবং এই গুনাহের কাজ গুলো আমাদের জান্নাতে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং আমার পথের মোড়টাকে ঘুরিয়ে জাহান্নামের দিকে অগ্রসর করে দেয়❤️।
সুতরাং আমাকে কি করতে হবে? এই নেক আমল করার পাশাপাশি অবশ্যই আরেকটা বিষয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সেটা হচ্ছে , গুনাহ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। হারাম থেকে দূরে থাকা, নাজায়েজ বস্তু থেকে দূরে থাকা। সালাত আদায় করতে করতে আমার কপালে সিজদার চিন্হ বসিয়ে ফেলেছি কিন্তু আমি যখনই মেসেঞ্জার গ্রুপে আড্ডা দিতে বসি, কোনো পারিবারিক আসরে বসি তখন আমি কি করি? তখন কথায় কথায় মুখ ফসকে আমার দ্বারা গীবত হয়ে যায়। কিংবা কেউ যখন মুখ ফসকে গীবত করে ফেলে আমি সেটা শুনি, তাকে বাধা দেইনা। ফোন স্ক্রল করতে করতে আমি মিউজিক শুনে ফেলি, আমি আমার নজরের খিয়ানত করে বসি, এই প্রতিটা হারাম থেকে আমাকে বিরত থাকতে হবে।
যদি আমি হারাম থেকে বিরত থাকতে পারি তাহলে আমি কি করলাম? নিজেকে জাহান্নাম থেকে হেফাজতের একটা পদক্ষেপ নিলাম এবং এই পদক্ষেপটা আমার জান্নাতে যাওয়ার পথটাকে সহজ করবে।
আমার দ্বারা কোন গুনাহগুলো হয়ে যায় জেনে কিংবা না জেনে সেই গুলো আমি লিস্ট করতে পারি। আমি অতিরিক্ত ফেইসবুকে স্ক্রল করে অযথা সময় নষ্ট করি, এটাও একটা গুনাহ। অযথা স্ক্রল করে সময় নষ্ট করতে করতে আমি নজরের খিয়ানত করি, গান শুনে বসি, এগুলোও গুনাহ। গল্পের আসরে আমার দ্বারা গীবত হয়ে যায়, রাগে ক্ষোভে আমি মানুষের গীবত করে ফেলি, মানুষের হক নষ্ট করে ফেলি, আমার কারো প্রতি হিংসা হয়, এই ভাবে নিজের খারাবি গুলো লিস্ট করতে পারি। পাতা উল্টে যখন আপনি নিজের গুনাহ গুলো দেখবেন সেটা হোক দশ দিন পর, হোক ১০মাস পর, তখন আপনি বুঝতে পারবেন আপনার মাঝে কোনো পরিবর্তন এসছে কিনা। আপনি কি ভালোর দিকে অগ্রসর হতে পারলেন, আপনি কি জান্নাতের দিকে অগ্রসর হতে পারলেন? নাকি জাহান্নামের দিকে আরেকটু এগিয়ে গেলেন? এই লিস্টটা করার কারণ যে, নিজের নাফসকে ধিক্কার দেয়া। নিজের নাফসকে ধিক্কার দেয়া যে তুমি কোথায় যাচ্ছো, কোন পথে যাচ্ছো?
আমরা যখন কোনো নতুন আমলের কথা শুনি যে আমলটার ব্যাপারে আমার আগে জানা ছিল না, যে আমলের অনেক বেশি ফযীলত, যে আমল করলে জান্নাত পাওয়া যায়, আমরা সেই আমলটা শোনার সাথে সাথে আমাদের মন চায় যে এই আমল আমরা কক্ষনো মিস করবো না। আমলটা জানার জন্য আমাদের কতো চেষ্টা কতো আগ্রহ থাকে, আমলটা করার জন্য আমাদের কতো ব্যাকুলতা কাজ করে অন্তরে❣️।
কিন্তু যেই ঝোলায় আমি আমার নেক আমলগুলো ভরছি সেইটা আমি ফুটো করে রেখেছি আমার গুনাহ দিয়ে। তাহলে সেই ঝোলা কি নেক আমল দিয়ে পরিপূর্ণ হবে? সেটা নিয়ে কি আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে পারবো?

এরকম যেন না হয় যে আমরা আখিরাতে গিয়ে হতাশ হয়ে যাই। সেজন্য যেটা করতে হবে, ঝোলার সেই ফুটোগুলো, গুনাহের দরজাগুলো বন্ধ করতে হবে। আমার খারাবি দিকগুলো আমি লিখে লিখে চেষ্টা করবো সেই খারাবি দিকগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে। শুধুমাত্র লিখেই ছেড়ে দেয়া না, আমি কিভাবে এই গুনাহ থেকে বাঁচতে পারি সেইটার একটা সম্ভাব্য উপায় দুই এক লাইনে লিখে ফেলা এবং সেইভাবে চেষ্টা করা। আমার হাতে এখনও কিছু সময় আছে। জিলহজ্ব এর দশক অব্দি যদি আমার হায়াত নাও থাকে, আমি যদি পৌঁছাতে নাও পারি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তো আমার এই
নিয়াত টা দেখবেন যে আমি গুনাহ থেকে ফিরে আসতে চেয়েছিলাম, আমি নেক আমল করতে চেয়েছিলাম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কি বান্দার এই পরিশুদ্ধ নিয়াত কবুল করবেন না? অবশ্যই করবেন ইন শা আল্লাহু
এজন্য আমাদের কাজ হচ্ছে পরিশুদ্ধ একটা নিয়াত বানিয়ে, আমরা যেমন নেক কাজে অগ্রসর হবো একই সাথে আমরা গুনাহ থেকে ফিরে আসবো। আমাদের দ্বারা যা কিছু ভুল ত্রুটি হয় সেই ভুল ত্রুটিগুলো থেকে আমরা ফিরে আসবো ইন শা আল্লাহু তাআলা। আমরা হারাম থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবো, আমরা তাকওয়াকে আকড়ে ধরবো ইন শা আল্লাহু ওয়া তাআলা !

শ্রুতিলিখন কার্টেসি : তালিমুন নিসা এর একজন শিক্ষার্থী বোন ( আল্লাহ উনার মেহনত কবুল করুন )
তালিম স্কুল ( তালিমুন নিসা ) ফেইসবুক গ্ৰুপ
তালিমুন নিসা ওয়েবিনার